www.ullas24.com

Breaking

26 May, 2021

ইচ্ছে পূরণ গল্পে এপি তালুকদার

ইচ্ছে পূরণ এপি তালুকদার
#সান্তাহার_টু_ঢাকা প্ল্যান করাই ছিল কিভাবে ফিরবো। তারপরেও আসার আগের দিন আমি আর মোস্তাফিজুর বাসার সামনে বসে পরিকল্পনা করছি আসলে কিভাবে গেলে ভালো হবে। যাওয়ার সময় যেহেতু সেতুর উপর দিয়ে গিয়েছি ফেরার সময় সেতুর নীচ দিয়ে মানে নৌকা দিয়ে পার হবার পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনা ছিল নাটোর হয়ে এনায়েতপুর দিয়ে খাঁজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এর সাথে যে ঘাট আছে সেখান থেকে নৌকা পার হবো। কেননা উত্তরবঙ্গে ট্রিপে আসা রুবেল ভাইয়ের নাটোরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু রুবেল ভাই জানালেন তিনি সিরাজগঞ্জ রোডে আছেন তাই নাটোরের পরিকল্পনা বাতিল করে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ হয়েই ফিরার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু পরিকল্পনায় নৌকা পারাপার বহাল থাকলো। ২১/০৫/২১ ভোর ৪ঃ২০ মিনিটে আমি আর মোস্তাফিজুর বাসার সামনে থেকে চালানো শুরু করলাম। খুব ভালো গতিতে চালাচ্ছিলাম, ভোরের বাতাস কানে কানে কথা বলছিল! পথিমধ্যে চালোনোর এক ফাঁকে কানে আওয়াজ এলো আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে!! পিছন ফিরে দেখলাম বান্ধবী তনু সাথে তার বর জিওন। ওরাও ঢাকায় ফিরছে। কথা হলো এবং বিদায় নিলাম। চালানো শুরু গন্তব্য বগুড়া চারমাথা রেলগেট সেখানে ডলার ভাই অপেক্ষা করছেন। সকাল ৭ঃ০০ টায় আমরা সেখানে পৌছে গেলাম। সেখানে ছিলেন ডলার ভাই আর আহম্মেদ ভাই তাদেরকে সাথে নিয়ে চালানো শুরু করলাম পথিমধ্যে আরো দুজন জয়েন করলো বগুড়া সাইক্লিস্ট এর। ৫০ কিলোমিটার প্যাডেলিং এর পরে ৭ঃ৪০ মিনিটে শাজাহানপুর এর একটি হোটেল এ ডলার ভাই আমাদের নাস্তা করান। নাস্তা শেষে আবার ও সাইকেলে জোর দেই, ডলার ভাই এবং তার গ্রুপের সদস্যরা কিছুটা পথ আমাদের সাথে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন এর পরে বিদায় নেন। আমাদের গন্তব্য হাটিকুমরুল সেখানে অপেক্ষা করছেন রুবেল ভাই। সাইকেলের দিকে সেই যে জোর দিলাম একটানে প্রায় গন্তব্যের কাছাকাছি কিন্তু রোদের তীব্রতা এতোটাই বেশি যে মনে হচ্ছিল একটু বসা দরকার, রাস্তার পাশেই গাছেঘেরা একটা বাগানে বসে পরলাম স্ট্রাভা বলছে ৮৪ কিলোমিটার হয়েছে গন্তব্যের বাকি আছে আরো ১০ কিলোমিটার প্রায় ১০ মিনিটের মতো বসে চাকা আবার ঘুরতে শুরু করলো, ১১ঃ৪০ মিনিটে গন্তব্যস্থল আমাদের দেখা দিলো। সেখানে রুবেল ভাইয়ের সাথে ছিলেন শাওন ভাই।
হাইওয়ে দিয়ে চালানোর কারনে রোদের তীব্রতা অনেকটা বেশি বলেই মনে হচ্ছিল তাই সিদ্ধান্ত হলো গ্রামের ভেতর দিয়ে যাবো। হাটিকুমরুল এর ভেতর দিয়ে চালানো শুরু করলাম গন্তব্য সিরাজগঞ্জের মতিন সাহেবের ঘাট। সিরাজগঞ্জ মেন শহরের ভেতরে উঠে গিয়েছি হঠাৎই চোখে পরে একটি বট গাছ, গোড়ার চারপাশ পাকা করা বসার জন্য বেশ উপযোগী। আমরা সাইকেল রাখতেই গ্রামের ডানপিটে কিছু ছেলেমেয়ে সাইকেল গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে আগ্রহ নিয়ে এটা সেটা ধরে দেখছে!! সেখানে আশে পাশে মসজিদ না থাকায় আমারা সামনে এগিয়ে যাই দুর্জয় বাংলা তোরনের সামনে একটা ছায়াঘেরা বাগানে বিরতি দেই। মোস্তাফিজুর আর রুবেল ভাই জুম্মা পড়তে গেলেন আর আমি সেখানেই থাকলাম। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। প্রায় ৩০ মিনিট পরে বৃষ্টির অসসান ঘটলো এবং রোদের তীব্রতা আরো বেরে গেলো!! ২ঃ৩০ মিনিটে এসে মতিন সাহেবের ঘাটে পৌছালাম। লোকাল নৌকায় নদী পার হবার চিন্তা ছিল কিন্তু সর্বশেষ লোকাল নৌকা ছিল দুপুর ১ টায় স্থানীয় লোকজন এর কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে চলে গেলাম জেলখানা ঘাটে সেখানে একটি নৌকা রিজার্ভ করে গেলাম চায়নাবাদ এ সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে আবার নৌকায় গন্তব্য বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট। বিকেলের হালকা রোদে যমুনার বুকে নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছি মনে হচ্ছে - “নদীর বুকে হাটছে আলো আঁকছে বিকেল নতুন প্রেম কাঁধের উপর ঠেকিয়ে মাথা বাঁচছে হৃদয় বাঁচছে প্রেম “। সেই প্রেম বেশিক্ষণ বাঁচলো না - ফুরিয়ে গেল সময়, শেষ হলো নদীর বুকে ভেসে থাকা। ঘুরতে শুরু করলো সাইকেলের চাকা, গন্তব্য টাঙ্গাইল মুন্নি আপুর বাসা। ঘুরতে ঘুরতে চাকার অবসান ঘটলো ১৫৯ কিলোমিটার চালিয়ে রাত ৮ টায় মুন্নি আপুর বাসায়। মুন্নি আপু অতি আন্তরিক একজন মানুষ এবং ফুটবল জগতে টাঙ্গাইলের মেয়েদের কাছে তিনি শুধু একজন কোচ নন বরং মায়ের মতন!! ভালোবাসা নিও আপু ২২/০৫/২১ ভোর ৪ঃ২০ এ মুন্নি আপুর বাসার সামনে থেকে ঘুরতে শুরু করলো সাইকেলের চাকা। ৪ কিলোমিটার চালিয়ে হাইওয়েতে। হাইওয়েতে উঠে মোস্তাফিজুর এর গন্তব্য সান্তাহার আর আমার গন্তব্য ঢাকা। আমি আর রুবেল ভাই ঢাকার উদ্দেশ্যে চালানো শুরু করলাম। কথা ছিল রুবেল ভাই আমাকে কিছুটা এগিয়ে দিবেন। পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে চালাচ্ছি তাই উল্টো দিক থেকে প্রচুর রিকশা, অটো আর সি,এন,জি এর চাপ ছিল। তাই আমরা হাইওয়ে দিয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। রাস্তা ক্রস করে হাইওয়ে তে উঠতেই চোখে পরে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা যা দেখে আমি সাইকেল চালানোর সাহস হারিয়ে ফেলি। ঘটনাটি ঘটে টাঙ্গাইল এর নাটিয়া পাড়াতে। ঘটনার বিবরণে যেতে পারলাম না!! এর পরে প্রায় ৩ ঘন্টা একটি মাচাতে বসে ছিলাম। মনের সাহস বাড়িয়ে আবার শুরু করি কিন্তু সাইকেল যেন চলছে না মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে। আমার এমন অবস্থা দেখে রুবেল ভাই আর আমাকে একা ছাড়েননি কালিয়াকৈর পর্যন্ত সাথেই ছিলেন। কালিয়াকৈর থেকে সজীব নামের এক ছোট ভাই আমাকে সঙ্গ দেয় এবং রুবেল ভাই বিদায় নেয়। সজীব কে সঙ্গী হিসেবে সাথে নিয়ে সাইকেলের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করলো। কথা ছিল সজীব আমার সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পার হয়ে ক্যান্টনমেন্ট এর ক্যান্টিন এ বিরতি দেই পানি, স্যালাইন কেনার জন্য। হঠাৎ সজীব বলে আপু আপনি সাইকেল চালাচ্ছেন কিভাবে পেছনের চাকাতো অনেক জ্যাম হয়ে আছে, বলেই সজীব সেটা ঠিক করার চেষ্টা করলো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পেছনের চাকার ব্রেক চলে গেলো। কি আর করার বললাম থাক বাদ দাও ডান টা দিয়েই চালাই ঢাকায় যেয়ে ঠিক করে নিবো। ক্যান্টিনেই ছিলেন একজন চাচা যার পড়নে ছিল সাইকেল প্রিন্টেড একটি টি-শার্ট এবং তিনিও রেগুলার সাইকেল চালান বেশ মজার মানুষ ছিলেন। চাচার নাম সামসুজ্জামান। বিদায় সাভার! ডান ব্রেক দিয়েই চালানো শুরু করলাম। সজীবের বিদায় নেওয়ার কথা থাকলেও ব্রেক এর সমস্যা হওয়ায় বিদায় আর নেওয়া হয়নি। ভয় ভয় ভাবে ধীর গতিতে চালাচ্ছি। বার বার ভুল করে পেছনের ব্রেক ধরতে যাচ্ছি, এভাবেই চলে আসলাম আমিন বাজার আর শুরু হলো ছোট খাটো যুদ্ধ!! এতোটাই জ্যাম যে রাস্তা পুরোই বন্ধ!! কোন রকম ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ছোট খাটো যুদ্ধ জয় করে দুপুর ২ টায় পৌছালাম টেকনিক্যাল মোড়ে। সেখান থেকে সজীব বিদায় নিলো এবং আমি রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। ২৬৫ কিলোমিটার চালিয়ে অবশেষে বাসায় ফিরি সুস্থভাবে। আলহামদুলিল্লাহ!

No comments:

Post a Comment

Pages