গোপন রাখা মানে গুনাহ করা
সানজিদা শাহীনুর
রেবাঃ এই তোরা কি শুনেছিস দিয়া রবিনের সাথে ঘুরতে গেছে? [আনন্দের সাথে কথাটা বলল]
জিনিয়াঃ না তো, আমরা তো শুনি নাই, তুই কিভাবে জানলি? [অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুরে দেয় রেবা কে]
রেবাঃ আরে এটা তো সবাই জানে, তোরা জানিস না? আমি তো ভাবলাম জানিস।
রিয়াঃ তুই কি ঠিক বলছিস যে দিয়া রবিনের সাথে ঘুরতে গেছে? নাকি মজা করছিস?
রেবাঃ সত্য বলছি আমি। মিথ্যা কেন বলতে যাব?
জিনিয়াঃ দিয়া এমন মেয়ে না যে সে কোন ছেলের সাথে ঘুরতে যাবে। ও তো ছেলেদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না।
রিয়াঃ হতেও পারে। হয়ত সে সবার সামনে....
তিতিন আর তাদের কথা শুনতে পারল না। উঠে ক্লাস রুমের বাইরে চলে আসলো। তিতিন, জিনিয়া, রিয়া ক্লাস রুমে এক সাথে বসে গল্প করছিল, এমন সময় রেবা এসে দিয়ার কথা শুরু করে। তিতিন মেয়েটা শান্তশিষ্ট আর গম্ভীর। সে বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়ে হিসেবেও তিতিন অনেকটা ধার্মীক। সে জানে এখানে তার বান্ধবীরা দিয়ার নামে গীবত করছে, তবুও সে তাদের কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসে।
ক্লাস শেষ করে তিতিন আর জিনিয়া এক সাথে বাড়ি ফিরছিল, যেহেতু তাদের বাড়ি পাশাপাশি। স্কুল থেকে বেশ কিছু দূর যাবার পর রিয়া এসে তাদের সাথে যোগ দেয়।
রিয়াঃ এই তোরা জানিস রেবা আমাদের ভুল কথা বলেছে।
জিনিয়াঃ কি ভুল বলেছে?
রিয়াঃ দিয়া ক্লাস শেষে মাঠে বসে ছিল। এমন সময় সে হটাৎ অসুন্থ হয়ে যায়, এতে রুবিনা ম্যাম রবিনকে বলে দিয়াকে বাসায় রেখে আসতে। কারণ দিয়ার বাড়ি তো রবিনের বাড়ির কাছে আর রবিন নাকি দিয়ার দুরসম্পর্কের ভাই হয়। রুবিনা ম্যাম জানে তাই অন্য কাউকে না বলে রবিনকে রেখে আসতে বলেন।
জিনিয়াঃ হুম বুঝলাম। রেবা ঘটনা যাছায় না করেই দিয়াকে অপবাদ দিচ্ছিল।
তিতিন শুধু তাদের কথা শুনছিল তেমন কিছু বলে নাই। জিনিয়া আর রিয়া অন্যান্যদের নিয়েও গীবত করছিল। রিয়ার বাড়ির রাস্তা এসে গেলে সে চলে যায়, আর জানিয়া তিতিন তাদের বাড়ির রাস্তায় যায়।
সন্ধায় বাসার হল রুমে....
আমেনা(তিতিনের মা): জানো আজ একটা ব্যাপার ঘটেছে
রাফি(তিতিনের ছোট ভাই): কি গো আম্মু? কি হয়েছে?
আমেনাঃ আজকে আমি বাজার থেকে আসছিলাম এমন সময় দুটো মহিলা তাদের কোন এক আত্মীয়ের গীবত করতে করতে যাচ্ছিলেন। এতে আমার খুব খারাপ লাগে। তাই আমি তাদের দুজন মহিলাকে রাস্তার এক পাশে দাড় করাই এবং তাদের কে সাবধান করে দেয় গীবত না করার জন্য।
রাফিঃ আম্মু উনারা তোমাকে কিছু বলল না? তুমি তাদের এমন ভাবে বলায়।
আমেনাঃ না, কি বলবে? প্রথমে একটু অন্য রকম করছিল। তারপর আমি যখন গীবনের শাস্তি সম্পর্কে জানালাম তখন তারা আমার কথা বুঝল আর তওবা করে নিল।
রাফিঃ আম্মু তুমি তো উনাদের চেন না, উনাদের না বললেও পারতা।
রফিক(তিতিনের বাবা): না আব্বু, তোমার আম্মু ঠিক কাজ করেছেন। কারণ উনারা না জেনে গুনাহে লিপ্ত হয়েছিলেন। এটা তোমার আম্মু বুঝতে পেরে উনাদের সাবধান করে দেন। তোমার আম্মু যদি উনাদের নসিহা না করে চলে আসতেন তাহলে এতে তোমার আম্মুর গুনাহ হতো।
রাফিঃ কিভাবে আব্বু? এখানে তো আম্মু কোন কিছু করে নাই। তাহলে আম্মুর কেন গুনাহ হবে?
রাফি এবার ক্লাস four এর ছাত্র। অনেকটাই অবুঝ। তিতিন রাফি আর তাদের আম্মু আব্বু নিয়ে তাদের ছোট পরিবার। তাদের পরিবার আদর্শিক হওয়ার সুবিধায় তাদের বাসায় প্রায় এমন বৈঠক হয়, যেখানে ইসলামি নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিতিন কিছু না বলে শুধুই তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
রফিকঃ কারণ উনারা না জেনে ভুল করছিলেন। কিন্তু তোমার আম্মু তো জানতো। তোমার আম্মু যদি উনাদের সাবধান না করতেন তাহলে তোমার আম্মুর গুনাত হতো। কারণ তোমার আম্মু জানা সত্ত্বেও তা গোপন করেছেন। ইসলামের জানা কোন বিষয় গোপন করা তো গুনাহের কাজ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَشْتَرُونَ بِهِۦ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَٰٓئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِى بُطُونِهِمْ إِلَّا ٱلنَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
নিশ্চয় যারা গোপন করে যে কিতাব আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে, তারা শুধু আগুনই তাদের উদরে পুরে। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। [আল বাকারা-174]
أُولَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشْتَرَوُا ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلْهُدَىٰ وَٱلْعَذَابَ بِٱلْمَغْفِرَةِ فَمَآ أَصْبَرَهُمْ عَلَى ٱلنَّارِ
তারাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করেছে। আগুনের উপর তারা কতই না ধৈর্যশীল। [আল বাকারা-175]
ইউসুফ ইবনে ইবরাহীম র. বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা. কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছিঃ যাকে কোন দীনের কথা জিজ্ঞাস করা হয়, আর সে তা গোপন রাখে, কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে। [ইবনে মাজাহঃ হা/২৬৪]
এবার বুঝেছ আব্বু সোনা।
রাফিঃ হ্যা আব্বু আমি বুঝেছি।
তিতিন তার আব্বুর কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। কারণ সেও তে গীবতের শাস্তির কথা জানে। আজ যখন ক্লাসে এবং রাস্তায় তার বান্ধবীরা গীবত করছিল তখন তো সে চাইলেই তাদের বুঝাতে পারত কিন্তু সে তো তা করে নাই। সে চুপ করে শুধু তাদের কথা শুনেছে। এতে তো সে গুনাহগার হয়ে গেছে। তারপর তিতিন আর সেখানে থাকতে পারলো না। রুমে যেতে গিয়ে তার আবাবুর কাছে ফিরে এসে বলে, আব্বু তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, এভাবে এতো বড় বিষয়টা জানানোর জন্য। তুমি আমার বেষ্ট বাবা।
কথা শেষে তিতিন রুমে চলে যায় এবং আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য সিজদায় লুটে পড়ে। আর নিয়ত করে এবার থেকে সে কোন অন্যায় কাজ দেখলে তা প্রতিহত করবে। সে আর এমন গুনাহ করবে না।।
-গোপন রাখা মানে গুনাহ করা
-সানজিদা শাহীনুর, রাজশাহী।
21 April, 2020
গোপন রাখা মানে গুনাহ করা
Tags
ISLAMIC#
Share This
About Ullas
ISLAMIC
Labels:
ISLAMIC
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Author Details
----
No comments:
Post a Comment